Saturday, August 23, 2014

কৈফিয়ৎ

কৈফিয়ৎ

এরকম একটা বই করব , কোনদিনই ভাবিনি । এই লেখাগুলো নিয়ে কি করব সে রকম কোন পরিকল্পনাও ছিলো না । লিখেছি, শুধুই একান্তে; নিজেই ছিলাম তার নিজস্ব সীমানা ; সেগুলো প্রকৃতপক্ষে উপযুক্ত লেখা হয়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম আর হাতও বাঁধা ছিলো, কারণ সরকারের কাছে মাথা ছিলো বাঁধা,  কোন লেখা ছাপতে দিতে পারতাম না । মূলতঃ তখন ছিলাম বাংলা থেকে অনেক যোজন দূরে, যেখানে সাহিত্য পৌঁছোতে আলোকবর্ষ নিয়ে নিতে পারে ।

আমি তখন সাহিত্যবর্জিত যুদ্ধক্ষত্রে নিজেকে কম্বাট্যান্ট প্রমাণ করার জন্য অন্যান্য ভাষাভাষীদের সাথে কদমে কদম মিলিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে প্যারেডের টার্নআউট করছি । আর ডিফেন্সে কাজ করার জন্য একটা রুল সব সময় মানতে হয়েছে কাজ করে তা হলো - হেডকোয়ার্টার কে না জানিয়ে কেউ প্রিন্ট মিডিয়াতে কিছু লিখতে পারবে না । সুতরাং কলমে তালা লাগিয়ে এটিসির টাওয়ারে পেন্সিল ঘষাঘষি করছি ।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পথের ঢেলা পায়ে ঠেলে লেফট রাইট সতীর্থ দের সাথে মার্চ করে চলেছি, তাঁদের কেউ আজ অবসরে গেছেন, কেউ কেউ বা শহীদ হয়েছেন । সেই রাত্রিব্যাপী গার্ড ডিউটি, সেই যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাবারুদ , প্যারেড গ্রাউণ্ডে বোম্ব ব্লাস্ট - এসবই ছিলো ঘটনাবহুল দিনলিপি যা এখনো তাজা স্মৃতি, লিখতে গেলে সম্পূর্ণ ফায়ারিং রেঞ্জ জুড়ে ভরে যেতে পারে লাল অক্ষর । সুযোগ হয়নি কিংবা হ্য়ত আইনের বাঁধা হাতে কলমও বাঁধা পড়েছিলো । এক দুবার নিজেরই বিরুদ্ধে এই বায়ুসৈনিক বিদ্রোহ করেনি তা নয়, যুদ্ধক্ষেত্রের লগ বুকে  এঁকেবেঁকে লিখেগেছি আবেগের গল্পকথা, হৃদয়ের গভীরের আওয়াজ ছবির মত ধরে রেখেছি ডায়েরীর পাতায় । মনে হয়েছে কেন এই যুদ্ধ ? কেন এই যুদ্ধের জন্য ওঁত পেতে থাকা ? বার বার মনে হয়েছে সভ্যতার এ কোন দিক দর্শন ?  বরং মনে হয়েছে ফিরে যাই চূর্ণির পারে যেখানে আমার কৃষক পিতা ছোট্ট পরিসরে ধানের জমিতে সবুজের ঘ্রাণ নিত । মনে হয়েছে বার বার ফিরে যাই সেই ধানক্ষেতের মাঝে যেখানে দেশের কোন সীমানা নিয়ে উতকন্ঠা নেই, নেই গোলাবারুদের কোন রাজনীতি, নিজের ভাব প্রকাশে বা কবিতা ছাপতে কোন মিলিটারী আইন কলমকে আটকে রাখে না ।

সেই স্বাধীনতার জন্যই হোক আর সার্বভৌমিকতা রক্ষার জন্যই হোক, সেনাবাহিনীতে সৈনিককে অধীন হয়ে থাকতে হয় কঠিন নিয়মানুবর্তিতার , সমস্ত দেশকে স্বাধীন রাখতে গিয়ে এক সৈনিককে উর্দির আবরনে বন্দী হয়ে থাকতে হয় সারা বছর । দেশবাসীর চোখে নিশ্চিন্ত ঘুম আনার জন্য সীমানায় সীমানায় সৈনিক ঘাম ঝরিয়ে যায়, নিজের ইচ্ছা, ভালোলাগা গার্ডরুমের পিছনে গচ্ছিত রাখতে হয় । এই সব অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা আমাকে দু এক লাইন লেখার জন্য বহুদূর টেনে নিয়ে গেছে, তবু আমি সেই সব লেখালেখি বাক্সবন্দীই রেখে গেছি, আজ কয়েক দশক অতিক্রান্ত হলো, পুরানো ডায়েরীর ছেঁড়া পাতাগুলি হাতড়ালে আমি আবার সেই সব অভিজ্ঞতাগুলির মুখোমুখী হই, সেই সব ছেঁড়া ছেঁড়া পাতা আমি সুতোয় গাঁথি, কিছু কিছু লাইন নাকি তার কবিতাও হয়ে যায় ।  এই সব জেনেছি যখন কিছু কিছু লেখা দিল্লির লিটল ম্যাগাজিন গুলো ছাপতে শুরু করে ।

এমনিতেই দিল্লিতে বাংলা কবিতার পাঠক সংখ্যা কম । একটি দুটি ছোট সাহিত্য সংস্থা পার্ট টাইম কবিদের নিয়ে আড্ডা বসায়, সেখানেই আমার কবিতার প্রথম প্রকাশ । অধিকাংশ লেখাগুলি তখনো বাক্স বন্দী । এরকমই কোন কোন আসরে যেতে যেতে হঠাৎই খেয়াল হলো, লেখাগুলি ডায়েরী থেকে এনে টাইপ করে ফেললে ভালো হয় এবং টাইপ হয়ে গেলে, অগুলো বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিনে ও ব্লগে দেওয়া যায় । ফেসবুকেও লেখাগুলি পোস্ট দিতে থাকি । বিংগো ! অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া । বাড়তে থাকে পাঠকের সংখ্যা, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য দেশ / প্রদেশ থেকে আসতে থাকে প্রতিক্রিয়া । সেই সাথে নিজেকে কবি কবি ভাবতে থাকি আমি আর কিছু কিছু নতুন লেখাও লিখতে থাকি । মূলতঃ এই সব লেখাগুলি আমার বায়ুসৈনিক কর্মকান্ড, মিলিটারী প্রোসিজিওর, প্যারেড, শুটিং রেঞ্জ, আর্মি যুবকদের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী নিয়ে যা আমার নিজে দেখা অভিজ্ঞতা বা নিজের অনুভব করা চিত্রকল্প । কোন কোন কবি বন্ধু আমার এই লেখাগুলি পড়ে আমাকে যুদ্ধের কবি বলেও আখ্যা দিতে চাইলেন আর আমি অনুপ্রানিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার আমি আগুনের মধ্য দিয়ে যাব , যে ভাবেই হোক, একটা বই বের করব যেখানে সব কটি কবিতাই হবে আমার সেই বায়ুসেনিক জীবনের কুড়িয়ে নেওয়া দিনগুলিকে কেন্দ্র করে ।আর সেই মৃত ও জীবিত সৈনিকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার একটি ছোট্ট প্রয়াসও হবে ।

আমার এই কবিতাগুলি সত্যিই কবিতা কিনা তা পাঠক এবার মুল্যায়ন করবেন এটাই আমার বিশ্বাস এবং এই ধরনের লেখা পরবর্তিতে আরো লেখা যায় কিনা তারও একটা মতামত পাওয়া যেতে পারে বলে একটা আবেদন পাঠকের কাছে আমি রাখতেই পারি । বিশেষ ধন্যবাদ দেব তাঁদেরকে যারা আমাকে এই বইটি করার জন্য উৎসাহ জুগিয়ে এসেছেন । আমার অগ্রজ শ্রী পলাশকান্তি বিশ্বাসও আমাকে সাহস জুগিয়ে এসেছেন এবং তাঁর সহযোগীতায় কলকাতার এক দুটি লিটল ম্যাগাজিনে আমার কবিতা ছেপেও বেরিয়েছে; কিন্তু আমি সেই অর্থে কবি হয়ে উঠিনি । আমাকে নিয়মিত কবিতা লেখার ভূমি প্রস্তুত করে দিয়েছেন "কথাঞ্জলি" পত্রিকার সম্পাদক শ্রী দিলীপ কুমার বন্দোপাধ্যায়, "প্রতিভা পথিকৃৎ" পত্রিকার সম্পাদক ও দিল্লির এক মাত্র বাংলা প্রকাশক শ্রী গোপাল চন্দ্র পাল । এছাড়া আরো অনেকেই আমাকে সাহায্য করেছেন এই বইটি প্রকাশ করার জন্য তাঁদের সবার নাম আমি এখানে উল্লেখ করতে পারলাম না বলে একটু খারাপও লাগছে । তবুও বলি, তাঁদের শুভেচ্ছা ও উৎসাহদানই আমার অনুপ্রেরণার উৎস । তাই সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ।


মহাবীর এনক্লেভ                                                                পীযূষকান্তি বিশ্বাস
নিউ দিল্লি
৭ জানুয়ারী ২০১৫


 
   


Friday, August 8, 2014

হীরানগর রেঞ্জে

হীরানগর রেঞ্জে //পীযূষকান্তি বিশ্বাস

মার্চ পথে পড়েছিল এক দো এক
লেফট রাইট ঘুরপাকে
আবাউট টার্ন
বাতাসে বারুদের সিগনাল
এক পা দুপা এগিয়ে আসছিলো
শতছিদ্র পুড়ে যাওয়া টারগেট
ডিটেল ফায়ার !

আতিপাতি হাত পা ছুঁড়ে
সালফারডাই অক্সাইড সাঁতরিয়ে
বুকের গভীরে ডুব দিয়ে তুলে আনা  
হিম শীতল খনিজ অনুভুতি
অতল গভীরে তার লেয়ারে লেয়ারে স্থবীর
বুলেটের শায়িত মৃতদেহ

পিত্তল পিচ্ছিল শরীর, মেদময় শরীরের মত
বারুদ স্থগিত থাকে
ঢাকা দিয়ে রাখে হলুদবরণ ঘুম ...
যেখানে চাঁদমারি উস্কানি দেয় আর দাঁড়িয়ে ঠাই
এই হীরানগর রেঞ্জ
লাইন বাই লাইন
তুমি , আমি,  নায়েক শতীশ কুমার,
হাভিলদার গাইকোয়াড়

ট্রিগারে আঙুল
সন্ধ্যার বাতাসে বাদামী অক্সিজেন,
দিগন্তে চমক পাহাড়ের কোল ঘেসে  
একদল হরিণ ছুটে যায়
নাভির নিচে গনগনে আগুন সামলিয়ে একটানে
আগামী লোনাবালার নিঃশ্বাস বুকে টানি ...

এখানেই অরগাজম !
সুইটস্পটে পাঁচ পা রেখে
বালির বস্তার পাশে ম্যাগাজিন খালি করে

শুয়ে থাকে উত্তপ্ত ম্যাসিন গান ।

Thursday, August 7, 2014

ক্রিমেশন স্যালুট


ক্রিমেশন স্যালুট // পীযূষকান্তি বিশ্বাস

দাঁড়িয়েছিলে খাঁড়া গম্বুজের মত,  
টিলার ওপারে ঠাই স্থির,
দুপায়ে নামিয়ে চোখ
অনেক ভিড়ের উপর
ভিড়টা তোমাকে দেখছিলো,
কিন্তু
ভিড়টা বোধহয় তোমার জন্য ছিলো না

শুধু মেঘ মুখী পতাকায় উড়ছিলো
স্বাধীনতার রং
প্রতিটা রক্তবিন্দু মুছে দিয়ে কার্গিলের প্রান্তর
সন্ধ্যা গোধুলি হতে চেয়েছিলে বুঝি

এই টিলার পাদদেশে দাঁড়ানো
নুড়ি পাথর ও বৈশাখী
তুমি হেঁটে আসো খাইবার পার হয়ে
তোমার প্রতিটা পদক্ষেপে
বিন্দু বিন্দু ডটে

মানচিত্র হেঁটে যায়,  
সীমানা এখানেই পড়ে থাকে,
মুখ থুবড়ে

তুমি তাই হাঁটুমুড়ে বসে পড়ো পরিখার পাশে
মাটির খুব কাছে
দুমড়ে মুচড়ে
ঘাস কামড়ে ধরো

ত্রিরঙ্গা ওড়ে,
বাতাসে মুক্তির সুবাস

'স্যালুট'

একটা কথাই আমার কলমে উচ্চারিত হয়,
এতটাই স্পষ্ট 
ঠিক যতটা আওয়াজে তুমি বুঝতে পারো
তোমার বুলেট ছিদ্র বুকের উপরে

আমরা ফুলের মালা রেখেছি । 






Sunday, May 11, 2014

ঝাউ পাতা

ঘুমিয়েছো ঝাউপাতা  

ব্যাগপাইপারের দ্রবনে ডুবিয়ে জমাট ক্লোরোফিল
কার্তুজের বাক্সে গুঁজে বরফ সিক্ত মাথা
ঘুমিয়েছে ঝাউপাতা

কোমরে গোঁজা বিশ রাউন্ড কার্তুজ
শির শির শীতল ম্যাগাজিনে জমে যাচ্ছে
নাতিশীতোষ্ণ মেদ...
রক্তে ধুয়ে দেবে বলে ড্রাস কার্গিল
প্যারেনকাইমা , স্কেলেনকাইমা ভরে
জমিয়ে রেখেছে রেডিও আইসোটোপ

লেফট রাইট লেফট রাইট সীমানার ওপার থেকে
মার্চ করে হেটে আসা হিমশীতল হাওয়া
এই সশস্ত্র রাত্রি
পাহাড় থেকে পাহাড়ে
পাহারার নেশায় বুঁদ

ওরা ঘুমায় মাটির গন্ধ শুঁকে মাতাল হয়ে 

Sunday, April 27, 2014

তে চল

'তে' চল

প্যারেড গ্রাউন্ডেই সকাল হলো
অনেক পায়ের ভিড়ে লেফট রাইট,
র‍্যাংক ও ফাইল

এভাবেই ক্রমাগত মার্চ
হাঁটু ভেঙে মাটিতে বারংবার  
বেষ্টনি দিয়ে প্রাচীর গেঁথেছি
আড়াল করেছি পর্ণকুটির সংসার

প্রিয় রাষ্ট্র
এই কুটিরেই তোমার জন্ম

এখানেই শিপ্রার বুকে ঢেউ
কিশোর কারাকোরামের নাকের নীচে
সদ্য ওঠা গোঁফ

এরপর এই দিল্লি
এক ইতিহাস,
এক ভূগোল

বেলা বাড়ছে

কুচকাওয়াজ শুরু হলো
বুটে বুটে ইট ভাঙ্গছে, ঘামে ভিজে যাচ্ছে কংক্রিট
দেওয়ালের মত ঠাই দাঁড়িয়ে সাবধানে

এখনো এই দুটি জঙ্ঘা ! 


Quick March


Crowds in the parade ground
in the morning
in rank and files

That's the way we march
bending our knees on the ground
we marched through the native villages

And there you born my dear state
and there the waves grown on the chest Shipra
and there the mustache grown beneath the nose
of the young Karakoram

And then
when the history of Delhi is raped
The sage geography felt whirlwind of high blood pressure
on every colorful page

Amlodipin packets are spreads on parade ground
In the preamble of prose
sweating noon continues
the quick march



Saturday, April 26, 2014

চল ক্যান্টে

চল ক্যান্টে // পীযূষকান্তি বিশ্বাস

চল ক্যান্টে,
যেখানে মাটিতে গেঁথে আছে তাবুর শিকল
অস্ত্রাগারে জমে আছে শুনশানি বারুদ
যেখানে শতাব্দী জুড়ে স্তুপ হয়ে চলেছে
সিপাহীদের নিঃশ্বাস ...


চলো সিঁদ কাটি সিপাহীর ব্যারাক
যেখানে সীমানা রক্ষী লিখছে
রণভুমির রোজ নামচা
আর তূনে তূনে জমে সমর কৌশল

যেখানে নীল পেগাসুস
আহত হওয়ার আগে  সৈনিকের রক্তে ডুব দিয়ে
নিভিয়ে ফেলে হাউৎজারের অ্যাঁক অ্যাঁক ধুঁয়া
বুকের উপর ফাটিয়ে কামানের গোলা
ঘুমিয়ে পড়ে একে একে ব্যাটেলিয়নের
বাঘা হাভিলদার

চলো ক্যান্টে, ঘুম চুরি করি
যেখানে শীতল মানচিত্র
এতটাই উঁচুনিচু গাড়োয়াল
এই কুজ্ঝটিকায় আবৃত এই যুদ্ধের প্রান্তর,
ও দিকটা বারুদের গরম বাজার
এ দিকটা চড়া চাহিদার
শীতল ঘুমের বেচাকেনা ;


যেখানে পাহারায় পাহারায়
প্রতিদিন পা হারায়
ন্যাতিয়ে পড়া ক্লান্ত প্যারেড গ্রাউন্ড...


অলকার মেদভহুল শরীরে নিলামে উঠেছে
ডিফল্টার ঘুমের আড়ত
কোমরের মেদবহুল খাঁজে যদি রাখি একখানি  গ্লসি পেপার
প্রিন্ট হয়ে আসবে এখনি ভাত ঘুম ,

যেখানে  আর এস বি এন গার্ডপোস্ট, টিলাটির  উপর
আঙ্গুলে ট্রিগার চেপে সসস্ত্র যক্ষ,
সমকামী মেঘবালক এসে তার গা ঘসে যায়,
একা,
একাই আমি
একাকী দাড়িয়ে দেখি জ্বলে ওঠা কার্বন

চলো ক্যান্টে,
ঘুম চুরি করি
যেখানে গ্রীন গেরুয়ায় আডজুট্যান্টের দরজা
ম্যাগাজিনের বুলেট গুনতে গুনতে আঙুলের ফাঁকে
একাকী পুড়ে যাচ্ছে আমার ছুটির দিনগুলো

অন্ধকার ঘেরা  ক্রিমেশন প্যারেডে
ওরা ও প্যাটেন্ট করে নিতে চেয়েছিলো
ম্যক্সওয়েলের নরম গদি বিছানা ...
বিক্রি হয়ে যেতে পারে সমস্ত ঘুমকণা

ছাউনিতে ছাউনিতে জমা হয়ে আছে সেই সব অন্ধকার ভল্ট
শহীদের টান টান পিটুইটারী গ্রন্থী থেকে ইনজেকশন আউট করে
বের করে জড়ো করা হচ্ছে এক্সেস ঘুম ডিপোজিট
অনাবৃত পড়ে রয়েছে স্তুপাকৃত ঘুমের বালিয়াড়ি

শত শত সৈনিকের,  আরোও কাঁচা পাকা ঘুম,
প্যাকেট প্যাকেট লিকুইড ঘুম
পলটনে জমা হয়ে জং ছিঁড়ে যায়


চল ক্যান্টে,
ঘুম চুরি করি...


Thursday, March 6, 2014

বুট

বুট / পীযূষকান্তি বিশ্বাস


রক্ত মাখিয়ে যে দুটি পা দিয়েছিলে
মাংসাশী বৃটিশের মুখে
র‍্যাডক্লিফের প্রতিটা কালির আঁচড়ে
ওরা তোমাকে উদ্ভিদ করে দিয়ে গেল

আংকল, বুটের তলাটা ক্ষয়ে গেছে
এবার ওটা চিলেকোঠায় তুলে রাখো

আর কত বদলাবে কদম?
গ্রান্ড ট্রাংক রোডের পাশে
পিচঢাকা সড়কের ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো
বুরি নজর তেরা মুহ কালা ।

বুট দুটো তুলে রাখো আংকল
পা দুটো এখানেই থাক

আলতো পায়ে চলো ঘাস বনে ,
যেখানে চৈত্রের জ্যোৎস্না পড়েছে স্বাধীন ভূমিতে
যে পথে , পড়ে থাকা ঝরা পাতারা উড়িয়েছে
বসন্ত ডেকে এনেছে

আর পাহারা নয়,
বরং
পা-হারাই ।




Tuesday, February 4, 2014

বারুদের গন্ধ


বস্তুত রাত্রিকালীন গার্ডডিউটি সেরে ঘুমাতে যাবার কথা
চোখে ভেঙে আসছিলো সমস্ত পাহাড়
দেখছিলাম পাহাড়ে যখন বৃষ্টি নামলো
বৃষ্টির রং বদলাচ্ছিল
পাহাড়টির নাম কারাকোরাম ।

আসলে ঘুমবাহী চোখ দুটো খুঁজছিল এক হিমবাহের ঠিকানা
যেখানে কণিকারা দানা বেঁধে
হয়ে যেতে রক্তক্ষয়ী রণাঙ্গন
কিংবা শিপাহীদের বরফঢাকা সমাধির উপরে
বিছিয়ে দিতে পারে এক আগুন বিছানা ।

হলুদ বসন্তের থেকে পতঝড় শীত আমার উর্দিতে
ডোরাকাটা দাগে দাগে স্পষ্ট লেগে থাকে
হেলমেটের স্ট্র্যাপে ময়লা সুতোয় আস্তরণে খানিকটা লবনের মত
যার গন্ধ খানিকটা মৃতপ্রায় ঝরনার মত
যারা ছুটে আসে চেনাবের খাদ থেকে
এসে কোন মৃত সৈনিকের নাকের উপর জুড়ে বসে
কিংবা ঘায়ে ভরা বুকের পাজরে,
পুঁজের উপরে বসে কেউ কেউ বুক ডন মারে ।

আসলে এই সব মাছিরা ওপেন-মার্কেটের হোলসেল বিক্রেতা
আর এই সব ব্যবসায়ীরা হল সেই হুন নেতা এটিলার বংশধর

আর আমার মত যারা
ষোল হাজার ফুট উচ্চতায় প্রাণের আহ্লাদে ক্যাম্প করছি ,
বেলুন ছেড়ে দিয়ে বাতাসের বেগ মাপছি
শতদ্রুর শ্বেতকায় বুদবুদের পাশে
কামানের ব্যারেলে ভরছি নিজের নিজের রক্ত ।

প্রকৃতপক্ষে ,
আমরা তো সেদিনই সাম্রাজ্যটা ভাসিয়ে দিয়েছি সিন্ধুর স্রোতে
ওদের রাজ্যপাটে আমার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহেরা
যেদিন আমার বাবা যেতো ওদের খামারে কাঠ কুড়াতে যেত
আমার মা যেতো ওদের বাড়ি বাসন মাজতে
তেরটি বসন্ত ঘুরতে না ঘুরতেই তারপর একদিন
আমার মা গর্ভবতী হলো ।

একদিন যবের সন্ধানে পেট উচু করে আমার মা ফিরছিলো
সিন্ধুর শ্যাওলায় পা পিছলে পড়েও গেলো আমার মা...
তারপর বহুদিন আমি কোন কবিতা লিখিনি
দশমাস দশদিন পরে ঘরে
জন্ম নিল গান্ধর্ব শিল্প...

আমরা যারা দেখেছি এই পঞ্চনদীর পাড়ে
ঘুম কাতর সিপাহীদের টেন্টের উপরে ঝুলে থাকা তাবু ,
ক্যাম্পে প্রতিদিন ভনভন উড়ে আসা অসংখ্য মাছিদের ঝাঁক
ওরা আমাদের বন্দুকের ট্রিগারের উপর বসে গা ঘসাঘসি করে
কেউ কেউ ঠ্যাং গলিয়ে চেটেপুটে খায়
কার্তুজের অর্ধদগ্ধ বারুদের অবশিষ্ট ।

ওরা কেউ কেউ আমার কানের কাছে ভনভন করে
গণ-সঙ্গীত গায় , মনে হয়
পাহাড় ঠেকে ঠিকরে আসছে বেস-কন্ট্রোলরুমের ওয়েলিং সাইরেন
প্রতিধ্বনিতে খান খান হয়ে যেতে চায় প্রতিশব্দগুলো
অ্যাংকলেট বুট পায়ে চড়াই ভাঙ্গি
ঘুমঘোরে পাহাড়ের চড়াই ,
আমারই পায়ের নীচে বয়ে যায় চেনাব কাদা কাদা
তাল তাল ঝিলামে অনেক বুদবুদ ঝর্ণা,
থক থক বিছিয়ে থাকে সমস্ত গিরিখাতে ...

আমি সে কাদায় পা দিই,  হাত ডুবাই , ক্রিমের মত
তাকে আমি মুখে মাখি দলা দলা,
ঠোঁটে, কপালে, গলার চারপাশে
চোখ বন্ধ করে,
দু ঠোটের উপরে নিচে জিভ দিয়ে চাটি

সবকিছুতেই আমি যেন হঠাৎ বারুদের গন্ধ পাই...

Monday, February 3, 2014

দিল্লি

দিল্লি


আরো একটু কাছে এসো সবুজ পাতা
মাটির আরো কাছে, লোধি গার্ডেনের পাথুরে উঠানে,
যেখানে সুলতানী সিপাহীদের তারুণ্যের গন্ধ এখনও মুচ মুচ,
হাতের উপরে মেলে দিয়ে শাখা প্রশাখা
সারিবদ্ধ কুচকাওয়াজের হেঁটে যাওয়া পথ

এই পথ ইন্দ্রপ্রস্থমুখী ,
তরাইন থেকে হেঁটে আসা মোহম্মদ ঘোরীর তাজা ধুলোছাপ
চুন বালি ও শ্যাওলার খাঁজে খাঁজে এখনো সফদরজংগ,
ইলতুৎমীসের প্রস্তর শহরে
যুদ্ধসজ্জায় দাঁড়িয়ে যুবক হাভিলদার

দেখ,  ঐ উঁকি মারে পোড়ামাটির কুতুব মিনার
ওখানে নজর নিবদ্ধ করো
দেখবে রাত্রির আকাশ তোমার চোখ জুড়ে ফুটিয়ে তুলেছে
হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা
কুতুবউদ্দিনের ঘোড়া !

বাবরের যে কামান একদিন ছিঁড়েছিলো পানিপথের ঢেউখেলা বুক,
ইতিহাসের খয়েরী পাতা থেকে
ঐ দেখোস্রোতবাহী যমুনার চরে এক পলকে চেয়ে আছে অশ্বারোহী
এক যুব রাজকুমার,
কালিন্দীকুঞ্জের অগভীর জলাশয়ে বিপ্রতীপ ছবি হয়ে 
হুমায়ুন এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে এখনো স্থির

পুরানা কিলার আঁধারে প্রস্তরীভূত হয়ে উঠেছে কবুতরের ডানা
রাঙা টিউলিপের পরাগে পরাগে জমে আছে পুরানো বিকেলের রোদ
পুকুরের কলমীর গন্ধে ভরা জলে ভেসে ভেসে
হাঁসেরা পেড়ে যাচ্ছে নিষিক্ত ডিম ...
আর দিনরাত্রি পাহারায় রাজপথে
আজ রাজধানী দিল্লি এখনো সজাগ জেগে আছে ।



Thursday, January 16, 2014

গন্তব্য


দিনগুলি চলে যায়
খাঁচাগুলো খালি করে
দিনগুলো থেকে খাঁচাগুলির স্থায়ীত্ব নিয়ে কোলাহল

কাঁচা বাঁশেও ঘর থাকে না
বাসা খসে পড়ে
বাঁশ দাঁড়িয়ে থাকে
খসে পড়ার সাথে সাথে
দিনগুলি স্বর্ণময় হইয়ে ওঠে !

পতাকাগুলো উড়তে থাকে
বাঁশে জড়িয়ে থাকে রেশমী কাপড়
রং শুধু আলাদা হয় - ক্ষণস্থায়ী
রণাঙ্গন থেকে রনাঙ্গনে

তাই শেষ ইচ্ছা যদি

প্রস্তরীভূত হয়ে যাই কোন শহীদ মিনারে । 


০২ জানুয়ারী  ২০১৪
মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

Tuesday, January 14, 2014

যুদ্ধের মহড়া

যুদ্ধের মহড়া


আমারও এক বক্ষ ছিল মৃত্যুঞ্জয়ী বারুদের এক নিরাপদ ঠিকানা
জীবন ঢেলে দিয়ে চেনাবের গিরিখাতে মরণপণ যুদ্ধের রক্ত স্রোতফেনা
পাহাড়ের খাদে খাদে জমে আছে সংগ্রামী সৈনিকের  লবনাক্ত ঘাম
সাইরেনের শব্দে পায়ে ফেলে পা, বর্ষার পিচ্ছিল পথে মার্চ বাম ডান বাম
অন্ধকার টাইগার হিল, মৎসের কনীনিকা লক্ষ্যভেদে তৈরী অর্জুনের তীর
সীমানার দেশরেখা টেনে ভূতলে নেমে আসে হিংস্র এক বিপক্ষ শিবির
পুড়িয়ে আসা পতাকা,পিছে ফেলে আসা ক্যাম্প, যুদ্ধক্ষেত্রের অমোঘ নিয়তি
বাঁ পাশে গহীন খাদ ,সামনে আঁধার , ডান পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া বুলেটের গতি
উরি ড্রাস কার্গিলের পর্ণমোচী আগুনের জমে যাওয়া চাংড়া বরফ
সিন্ধুর বুঁদবুঁদ স্রোতে ভেসে যাওয়া মাছেদের সেইসব নীল মৃত চোখ...

জীবন এখনো শ্রাবন, রাজপথে দেখি শহীদের মৃত ভাইদের প্রাণপনে লড়া
আজও টের পাই শিরায় শিরায় সেই রক্ত, পায়ে পায়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মহড়া ।


০৬ জানুয়ারী  ২০১৪

মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

Saturday, January 11, 2014

অওর !! য়্যাস হো রাহা হে ?

অওর !! য়্যাস হো রাহা হে ?


সবুজের মাঝখানে ফুলে ফুলে রং ছিল বেশী
মধু ছিল কম।

চিৎ হয়ে কান ধরে
জিভখানা উল্টে রেখে ঠোঁটে
লেফট রাইট, লেফট রাইট
নাইট রোলকলের শেষে
এক ফ্লাইট নপুংশক মৌমাছি
মার্চ করে ঢুকে গেল মুঘল গার্ডেনের গভীরে।

এই সব ইট চুন পাথর পচা পরিখায়,
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীরা
এখনো গভীর শীতের রাতের পূর্ণিমার চেরা চেরা আলোয়
আধো ঘুমে আধো স্বপ্নে
নাইট প্যাট্রোলে
কাঁপা কাঁপা গলায় ফিস ফিস আওয়াজে
প্রেমালাপ করে।

--“হল্ট, হ্যান্ডস আপ, কোন আতা হে ? পাসওয়ার্ড ? ”
--“মেজর গুলাব শিং......”
--“জয় হিন্দ স্যার”
--“অওর য়্যাস কর রাহা হে, ব্লাডি শোতা হে ?”

থ্রি নট থ্রি হাতে বেল্টধারী শান্ত্রি গ্রেফতার হয় 
রাত্রের নিস্তব্ধতার বজ্রকঠিন হাতে।

জানুয়ারীর শীতের কুয়াশার পর্দা সরিয়ে
শৃঙ্খলার শৃঙ্খলে
যখন রক্তলাল স্বপ্নাতুর চোখে ঘুম ভাঙে রাত্রির
বাউজারের ট্যাপনল থেকে টপ টপ পড়তে থাকে
ফোটা ফোটা রোদ্দুর ...

সবুজের মাঝখানে ফুলে ফুলে রং ছিল বেশী
মধু ছিল কম।




০২ মার্চ  ২০০০
সুব্রত পার্ক, নতুন দিল্লি