Tuesday, February 4, 2014

বারুদের গন্ধ


বস্তুত রাত্রিকালীন গার্ডডিউটি সেরে ঘুমাতে যাবার কথা
চোখে ভেঙে আসছিলো সমস্ত পাহাড়
দেখছিলাম পাহাড়ে যখন বৃষ্টি নামলো
বৃষ্টির রং বদলাচ্ছিল
পাহাড়টির নাম কারাকোরাম ।

আসলে ঘুমবাহী চোখ দুটো খুঁজছিল এক হিমবাহের ঠিকানা
যেখানে কণিকারা দানা বেঁধে
হয়ে যেতে রক্তক্ষয়ী রণাঙ্গন
কিংবা শিপাহীদের বরফঢাকা সমাধির উপরে
বিছিয়ে দিতে পারে এক আগুন বিছানা ।

হলুদ বসন্তের থেকে পতঝড় শীত আমার উর্দিতে
ডোরাকাটা দাগে দাগে স্পষ্ট লেগে থাকে
হেলমেটের স্ট্র্যাপে ময়লা সুতোয় আস্তরণে খানিকটা লবনের মত
যার গন্ধ খানিকটা মৃতপ্রায় ঝরনার মত
যারা ছুটে আসে চেনাবের খাদ থেকে
এসে কোন মৃত সৈনিকের নাকের উপর জুড়ে বসে
কিংবা ঘায়ে ভরা বুকের পাজরে,
পুঁজের উপরে বসে কেউ কেউ বুক ডন মারে ।

আসলে এই সব মাছিরা ওপেন-মার্কেটের হোলসেল বিক্রেতা
আর এই সব ব্যবসায়ীরা হল সেই হুন নেতা এটিলার বংশধর

আর আমার মত যারা
ষোল হাজার ফুট উচ্চতায় প্রাণের আহ্লাদে ক্যাম্প করছি ,
বেলুন ছেড়ে দিয়ে বাতাসের বেগ মাপছি
শতদ্রুর শ্বেতকায় বুদবুদের পাশে
কামানের ব্যারেলে ভরছি নিজের নিজের রক্ত ।

প্রকৃতপক্ষে ,
আমরা তো সেদিনই সাম্রাজ্যটা ভাসিয়ে দিয়েছি সিন্ধুর স্রোতে
ওদের রাজ্যপাটে আমার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহেরা
যেদিন আমার বাবা যেতো ওদের খামারে কাঠ কুড়াতে যেত
আমার মা যেতো ওদের বাড়ি বাসন মাজতে
তেরটি বসন্ত ঘুরতে না ঘুরতেই তারপর একদিন
আমার মা গর্ভবতী হলো ।

একদিন যবের সন্ধানে পেট উচু করে আমার মা ফিরছিলো
সিন্ধুর শ্যাওলায় পা পিছলে পড়েও গেলো আমার মা...
তারপর বহুদিন আমি কোন কবিতা লিখিনি
দশমাস দশদিন পরে ঘরে
জন্ম নিল গান্ধর্ব শিল্প...

আমরা যারা দেখেছি এই পঞ্চনদীর পাড়ে
ঘুম কাতর সিপাহীদের টেন্টের উপরে ঝুলে থাকা তাবু ,
ক্যাম্পে প্রতিদিন ভনভন উড়ে আসা অসংখ্য মাছিদের ঝাঁক
ওরা আমাদের বন্দুকের ট্রিগারের উপর বসে গা ঘসাঘসি করে
কেউ কেউ ঠ্যাং গলিয়ে চেটেপুটে খায়
কার্তুজের অর্ধদগ্ধ বারুদের অবশিষ্ট ।

ওরা কেউ কেউ আমার কানের কাছে ভনভন করে
গণ-সঙ্গীত গায় , মনে হয়
পাহাড় ঠেকে ঠিকরে আসছে বেস-কন্ট্রোলরুমের ওয়েলিং সাইরেন
প্রতিধ্বনিতে খান খান হয়ে যেতে চায় প্রতিশব্দগুলো
অ্যাংকলেট বুট পায়ে চড়াই ভাঙ্গি
ঘুমঘোরে পাহাড়ের চড়াই ,
আমারই পায়ের নীচে বয়ে যায় চেনাব কাদা কাদা
তাল তাল ঝিলামে অনেক বুদবুদ ঝর্ণা,
থক থক বিছিয়ে থাকে সমস্ত গিরিখাতে ...

আমি সে কাদায় পা দিই,  হাত ডুবাই , ক্রিমের মত
তাকে আমি মুখে মাখি দলা দলা,
ঠোঁটে, কপালে, গলার চারপাশে
চোখ বন্ধ করে,
দু ঠোটের উপরে নিচে জিভ দিয়ে চাটি

সবকিছুতেই আমি যেন হঠাৎ বারুদের গন্ধ পাই...

Monday, February 3, 2014

দিল্লি

দিল্লি


আরো একটু কাছে এসো সবুজ পাতা
মাটির আরো কাছে, লোধি গার্ডেনের পাথুরে উঠানে,
যেখানে সুলতানী সিপাহীদের তারুণ্যের গন্ধ এখনও মুচ মুচ,
হাতের উপরে মেলে দিয়ে শাখা প্রশাখা
সারিবদ্ধ কুচকাওয়াজের হেঁটে যাওয়া পথ

এই পথ ইন্দ্রপ্রস্থমুখী ,
তরাইন থেকে হেঁটে আসা মোহম্মদ ঘোরীর তাজা ধুলোছাপ
চুন বালি ও শ্যাওলার খাঁজে খাঁজে এখনো সফদরজংগ,
ইলতুৎমীসের প্রস্তর শহরে
যুদ্ধসজ্জায় দাঁড়িয়ে যুবক হাভিলদার

দেখ,  ঐ উঁকি মারে পোড়ামাটির কুতুব মিনার
ওখানে নজর নিবদ্ধ করো
দেখবে রাত্রির আকাশ তোমার চোখ জুড়ে ফুটিয়ে তুলেছে
হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা
কুতুবউদ্দিনের ঘোড়া !

বাবরের যে কামান একদিন ছিঁড়েছিলো পানিপথের ঢেউখেলা বুক,
ইতিহাসের খয়েরী পাতা থেকে
ঐ দেখোস্রোতবাহী যমুনার চরে এক পলকে চেয়ে আছে অশ্বারোহী
এক যুব রাজকুমার,
কালিন্দীকুঞ্জের অগভীর জলাশয়ে বিপ্রতীপ ছবি হয়ে 
হুমায়ুন এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে এখনো স্থির

পুরানা কিলার আঁধারে প্রস্তরীভূত হয়ে উঠেছে কবুতরের ডানা
রাঙা টিউলিপের পরাগে পরাগে জমে আছে পুরানো বিকেলের রোদ
পুকুরের কলমীর গন্ধে ভরা জলে ভেসে ভেসে
হাঁসেরা পেড়ে যাচ্ছে নিষিক্ত ডিম ...
আর দিনরাত্রি পাহারায় রাজপথে
আজ রাজধানী দিল্লি এখনো সজাগ জেগে আছে ।