Saturday, September 28, 2013

ওরা মার্চ করে


ওরা মার্চ করে


ধমনীর  স্রোতধারায় যে রক্ত
মানুষের হৃদয়ে আনে উচ্চ অভিলাষ
অর্থ, প্রেম, খ্যাতির চুড়ায় কীর্তিময় জীবনের গতি
ভালোলাগা অনুভুতি
ছোট বড় দুঃখ ব্যথা, আবেগী অভিমান
হৃদয়ে হৃদয়ে মিলে বিস্মিত অনুরণন
না-বলা ভাষা, সহস্র গল্প ও কথা
কন্ঠ মিলিয়ে বলায়
কাহিনী, কবিতা ।


মৃত্যুর চিতাকাঠ
প্রেমিকের ব্যর্থ প্রেম-নিবেদন
শিল্পীর ক্যানভাসে,
নীলাভ চোখের পাতায় অশ্রু থেকে ঝরে পড়ে
নারীদের সয়ে যাওয়া অলেখা রোদন
কিংবা বিগ্রহ বন্দনায়,
ভালোবাসার পূজারি 
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মিশে হেমন্তের বাতাসে
কবিরা ফিরে ফিরে আসে ।

যেদিকে তাকাই
মানুষের প্রেম দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই
সবুজের উপরে নীলাকাশ, উল্টে চাল
বীজখেতে পড়ে আছে চাষীদের হাল
এভাবেই
পৃথিবী জুড়ে,  পাকে ধান
ঘরে আসে সোনালী সন্তান
শান্তির স্বস্তিকা আনে শিশুর আগমন
সামাজিক জীবন গড়ে সুখী গৃহকোণ ।

জীবনের ধারা, কাল ও আজ
এক সামরিক মহড়া,
প্রতিপদে মেলানো এক ছন্দোময় কুচকাওয়াজ
দেশকে ঘিরে আছে একদল প্রহরী সেনা
রোদ ঝড় বৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে      
সামাজিক জনতা কখনো ওদের
খবরও রাখে না ।

ওরা চিরকাল
যুদ্ধ লড়ে, হয়ে থাকে ঢাল
শত্রুর তীক্ষ্ণ তরবারির সামনে বক্ষ চিতিয়ে করে
জনতাকে আবডাল...

ওরা মার্চ করে
সামাজিক জীবনের কুটির বানাতে
বাঁশ - খুঁটির কাজ করে।

অশ্বখুরে উড়িয়ে দিয়ে শত্রুমুখে ধুলো
গুড়িয়ে দিয়ে হিংস্র বর্বরতা
সাম্রাজ্যবাদীর পাঞ্জা থেকে
ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা ।

ওরাও কাজ করে,
রাজপথে ,রাজ দরবারে
জলস্থলে, অন্তরীক্ষে, জঙ্গলে পাহাড়ে
এদেশে, বিদেশে, শান্তিতে যুদ্ধে, রোদ জল বৃষ্টিতে
পরীক্ষাগারে, রাসায়ানিক সৃষ্টিতে ।

একদিন রাজছত্র ভেঙ্গে পড়ে
মহা-অহংকারী অর্থনীতি চুরমার
রাজনেতা এসে বেদখল করে
সমস্ত মানবাধিকার...
জনপথ লুটিয়ে যায় , মুছে যায় গোধুলি
রক্ত রাঙা আকাশে
বিলীন হয়ে যায় কাহিনীগুলি,
এ সবও একদিন হারিয়ে যায় কালের অন্ধকারে
হিংসার ছিটা লেগে রক্ত হয় লাল
এমনিই গড়িয়ে যায় দিন, মাস, সাল,
রাঙিয়ে যায় রণভূমির মাটি
কলিঙ্গ, বক্সার, পানিপথ, তরাইন,
পলাশী , হলদিঘাটি ।

ঘোড়ার খুরে খুরে উড়েছে পথরেখা
জন্ম নিয়েছে দেশ, সাম্রাজ্য , এঁকেছে মানচিত্র
নবতর সীমানা হয়েছে লেখা
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে জমে জমাট রক্ত,
কৃষ্ণ ও কঠিন
 দিগ্বীজয়ী  হিংস্র শত্রুদের আক্রমণে দিনদিন
বর্ষার আবহাওয়া
আর্দ্র খাইবার গিরিপথ
দুর্গম গিরি চট্টান দাঁড়িয়ে
প্রতি বাঁকে জনপদ ।
প্রতি বাঁকে উঠেছে রক্তিম সুর্য, জনজাগরণ,
রাজপথে বিজয় মিছিল
পথ হয়েছে আরো লবনাক্ত,
কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল।

এই গিরিপথ ধরে,
হেঁটে এসেছে
লেফট রাইট লেফট রাইট
সেনা ও সেনাপতি
ডেকে এনেছে ওদের
মহাকাশের এক, কালো মহাকাল গতি
এক মহাযুদ্ধের পরিণামে--
এই মহাকাশ তলে
মিশে গিয়েছে ওরা, রণভুমির বুকে
পৃথিবীর কাদাজলে।

ওদের বিজয়রথ
পায়ে গুড়িয়ে বন্ধুর ভুমি
বন্ধু করেছে পথ।

হিংস্র অন্ধকার ঠেলে,
চোখে মুছে স্বপ্ন-ঘুম
জনপদ দেখবে বলে প্রশান্ত প্রভাত, 
সীমানার পারে ওরা তাই, টহলদারিতে
মার্চ করে সারারাত ।

ছাউনি থেকে ছাউনি, সীমানার ছাড়িয়ে সীমা,
শত শত রক্তাক্ত রণাঙ্গন থেকে রাজপথে নেমে,
লেফট রাইট লেফট, অষ্টপ্রহর , গ্রাম ও শহরে
ওরা মার্চ করে।

৬ আগস্ট, ২০১৩

মহাবীর এনক্লেভ,  নতুন দিল্লি

Friday, September 20, 2013

দম


দম


অ্যাংকলেট বুট্ পায়ে জমেছিল এতদিন যতটা মার্চ
হাঁটছি আর হাঁটছি,
হয়না শেষ তবু লেফট রাইট লেফট
পরিবর্তনের হাওয়া নাকি আনবে স্বাধীনতা,
হয়ত আনবে একদিন
আমাদের তবু
ঘড়ির কাঁটার মত
শুধু ঘুরে যাওয়া যান্ত্রিক
দুপায়ে জমানো শেষ হয়ে গেলে মার্চ
আবার ভরে দেওয়া হবে ‘দম’...

তাকাই সম্মুখে বিস্তর প্রান্তর
সময়ের সমতলে দ্বিমাত্রিক আমাদের প্রপিতামহগণ
কালের  ঊর্ধে ওরা ওঠায়নি মাথা
আরো দূরে , বহুদূরে মহাকাশ পারে
ওদের সহোদর বুঝি এমনি আগ্নেয়গিরি
ধোঁয়া ভরা আগুনে লাভা উগরায়...
আল্পসের পাদদেশে জীউসের সিংহদ্বার
ম্যাসিডোনিয়ার রণভূমি পার হয়ে
উঠে আসে আলেকজ্যান্ডার
উচু শির, ঋজু দেহ, লৌহকঠিন পদযুগলে
ধেয়ে আসে ওরা লেফট রাইট লেফট
র‍্যাংক ও ফাইলে ।

শতদ্রু দাঁড়িয়ে দেখে, দুচোখ ডুবিয়ে দেখে সিন্ধু খরস্রোতা
রোদ-ঝড়-বৃষ্টি নিয়ে, ওদের ক্লান্ত দুপায়ের হাঁটা
করেছে মার্চ ওরা ভরা বর্ষার রণভূমি জুড়ে
পৃথিবীর জল কাদা লেগেছে শরীরে

ওদের দু চোখে ঘুমিয়ে নেবার স্বপ্নে
সামাজিক জীবন ডুবে গেছে কখনো ইতিহাস ঘুমে
ঘুম থেকে জেগে কখনো
পানিপথ সেজেছে আবার কুচকাওয়াজে,
বেজেছে সহস্র মাদল
সারিসারি অশ্বারোহী আধুনিক রণসজ্জায়
আধুনিক আরো, অত্যাধুনিক, আর্টিলারী ব্যাটেলিয়ন,
সমরসজ্জায় সৈন্যবাহিনী
তরাইন ধুয়ে বর্ষা এনেছে দুজোড়া বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী
যুদ্ধ দেখেছে যুদ্ধ প্যারেড, যুদ্ধ পারমানবিক
মানুষ দেখেছে প্রাণীদের ছোটা, প্রাণপণে চারিদিক
দিকবিদিক শূন্য করে হতভম্ভ হাহাকার
সৃষ্টির বুকে আগুন জ্বালিয়ে পদাতিক অহংকার
হাঁটছি তবু পৃথিবীর বুকে,
আমাদের মহাশূন্যে হাঁটা
সামরিক জীবন সামাজিক মার্চে মিলিয়েছে দুইপা ।

চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটছি আমরা , পায়ে জমে আছে পথ
প্রতি সাম্রাজ্য দিবারাত্রি প্রতি শতাব্দী গড়ে তুলি জনপদ
আঁধারের বুকে প্রাণিদের সাথে প্রাণিদের সংগ্রাম
প্রতিটা প্রজাতি যোগ্যতমের উদবর্তনে হাঁটলাম
প্রতিটা শতাব্দী তবুও খুঁজে যায়, মানুষের বিবর্তন
জীবনচক্রের  সামাজিক জীবন , মানুষের স্বাধীনতার,
একদিন শতাব্দীও শেষ হয়ে যায়,  একদিন ডুবে যায় সে  নক্ষত্রও ।
হয়ত একদিন
স্বাধীনতা ফিরে পাবে সে দেশরেখা
নক্ষত্রের মৃত্যুর সাথে হয়ত থেমে যাবে মার্চও একদিন
পথ শেষ হয়ে যাবে কোন এক ব্লাকহোলের প্রান্তে ।

আর ব্লাকহোলও হিম হয়ে যায়...তারপর ?

হয়ত বা আবার কোন দিন
উল্টে হিমের চাদর
নতুন ব্রম্মান্ড ফের জ্বালাবে নব উষা ভোর
নতুন সময় স্রোত, নতুন উদ্দমে এক নতুন জীবন পথ
নতুন টাইম, নতুন এক ডেট
ঘড়ির কাঁটা আবার শব্দ করে চলবে
লেফট রাইট লেফট, লেফট রাইট লেফট ।

৬ আগস্ট, ২০১৩

মহাবীর এনক্লেভ,  নতুন দিল্লি

Sunday, September 8, 2013

শারদীয়া দূর্গাপূজা ২০১৩


শারদীয়া দূর্গাপূজা



ধুপের ধোঁয়ায় বারুদের গন্ধ
পুজোর প্যান্ডেল সেজেছে রাংতার সজ্জায়
সেঁদিয়ে উঠেছে বিলের মাঠ, আমন চাষের মাটি
বাতাস মজেছে শিউলির সুগন্ধ শিহরণে...
ঢ্যাম কুড় কুড় , ঢ্যাম কুড় কুড়
ঢাকে পড়ল কাঠি ।


দুঃখ মোচনে শান্তির বার্তা
অসুর দমনে শঙ্খ হাতে, মায়ের আগমন।
বল দুর্গা মাই কি,
বল দুর্গা মাই কি


দুর্গা দুর্গতিনাশিনী, নাকি দুর্গেশনন্দিনী...
দুর্গাকে কাছে পায় কোন সন্তানে ?
সিন্ধুর তরল রক্ত প্রবাহ যখন
ঘাটের পাড়ে ধাক্কা লেগে ঢেউ কাদা কাদা ,
লুটিয়ে পড়ছে পায়ে কাশ বন সাদা সাদা,
তখন
সন্তানের স্কন্ধ থেকে, টেনে ছিঁড়ে
কেটে নিয়ে গেছে মাথা একে একে পাঁচ




সীমানার ওপারে বিপক্ষ সেনা,
এক পায়ে দাঁড়িয়ে তাল গাছ, সারিসারি সেনা
চন্ডী-মন্ত্রে বাঁধা হাত,
সাদা মেঘে মুদেছে চোখ শরতের বিকেল,


একটাও গুলি তাই ফায়ার হল না
একটাও দেহ ওদের শহীদ হল না ।


যারা সীমানার অধিকার নিয়ে
মর্ত বিজয়ে, বেরিয়েছে মহিষাসুর
ওরা কেটে নিয়ে গেল কার্তিকের ফসল
ধোঁয়াটে গন্ধে শুকায় সদ্য জাগা মাঠ
ডুকরে কাঁদছে রাত,
আঁধারের কাঁধে রেখে মাথা
শীতের কুয়াশা জমেছে, চোখের পাতায়, ভ্রুর কিনারায়
ঐ কে আসে রাঙা পায়ে, প্রশান্ত মুখ, নিটোল অবয়ব
চুলে তার ধুপের গন্ধ,
বার বার প্রতিবার, প্রতিবর্ষ ঘুরে
আসা যাওয়া তার,
কেউ বলে মা আসে, অসুরমর্দিনী !
কেন , কেন , কেন আসে সে ?
সন্তানেরে এগিয়ে দিয়ে সম্মুখ সমরে
কোন অসুর বধে হবে অকাল-বোধন ?


ধূপের ধোঁয়ায় বারুদের গন্ধ
পুজোর প্যান্ডেল সেজেছে রাংতার সজ্জায়
সাঁঝের আকাশে উঠেছে অনেক তারা
বারুদের ধোঁয়ায় ভালো ঠাহর করা যায় না
কোন তারাটি খসে গেল
কোন তারাটির বউ মরা
কোন তারাটির বর মরা
মরছে প্রতিপদে সংগ্রামী সৈনিক
মরছে প্রতিবাদী সন্তান দৈনিক
বার বার প্রতিবার, আসছে বছর
বল দুর্গা মাই কি গ্রাম ও শহর
শারদীয়ার বার্তা নিয়ে অসুর দমনে
তবু আসে মাতা কেন মর্তভ্রমণে ?


২৫ আগস্ট, ২০১৩


মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি