Thursday, October 31, 2013

সেকেন্ড ইনিংস



সেকেন্ড ইনিংস / পীযূষকান্তি বিশ্বাস

আজ কোনো গোলাবারুদ নয়, বোম্ব ব্লাস্ট নয়
এমন কি খেলনা পিস্তলের ফায়ারিং ও নয়
কোন শব্দ নয় আজ কোনো ।

যুদ্ধ শেষ
ঘরে ফেরার পথ
অবন্তীপুরের ধোঁয়ামাখা মেঘের পাহাড়ী খাদে
চৌচির হেলিকপ্টার...

ছুটিতেও ফেরা হল, কাঁধে, কফিনে
এ মরণকে তাই শহীদ বলে না ।

কোন শব্দ নেই আজ কোনো
যে সব শব্দে, বাক্যরা রূপক হয়                        
কিংবা যে সব শব্দেরা উপমা
তারা নাও হতে পারে কবিতা

তবু শব্দেরা আবার ঘুরে ফিরে আসে বাক্যে, কবির কলমে
উদগ্রীব হয়ে থাকে লেখনীর মুখে   ...

শুধু শহীদ হবার জন্য
মৃত্যুরা...
কোনো দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না ।

Tuesday, October 29, 2013

ঢেউদের কথা

ঢেউদের কথা


নদী, তোর অনেক ফ্যান
দুপাশে ব্যস্ত জনপদ
কখনো গহীন খাদ,
কখনো ব্রীজের নিচে দিয়ে চলা তোর নিজস্ব চলন
কখনো ব্রীজের উপর শুনি তোর ঠক-ঠক হাই হিল !
ফেসবুকে তোর অনেক লাইক
তোর ঐ বেঁকে যাওয়া কোমরের আধা উষ্ণ খাঁজে
আধা গলা চীজ,
ডোমিনোজ্ পিৎজার ডো !
ওখানেই আটকে আছে ক্ষুধার্ত চোখের নিশানা ।

নদী, তোর অনেক ফ্যান,
নাহ্ ! আমি বরং আজ তোর গভীরের
ঘাটে ঘাটে খেটে খাওয়া পদাতিক ঢেউদের কথা লিখি
ছোট ছোট পায়ে kkhudroti khudra
ঢেউদের nirupay podocharona  ?

ক্ষুদ্র তবু দেখো
ওদের সমব্যথী প্রাণ,
হৃদয়ে শ্রেণীবদ্ধ ইচ্ছের উথাল পাথাল
বুকের সমতলে ওদের দলবেঁধে মার্চ
এক সাথে চেঁচিয়ে বলা এক দো এক, এক দো এক
এক ডিভিশন সৈন্য যেন কুচকাওয়াজ করে ....


ওরাও মার্চ করে,  সার বেঁধে যুদ্ধক্ষেত্রে যায়
ওরাও স্বপ্ন দেখে এক মহাযুদ্ধের গতি বেগ
অবিরাম স্রোতের গর্জনে
ওরা ক্যাম্প করে, ঘুমায়

ঢেউরাও অনুভব করে এক সাইন ওয়েভ
ওরা স্ট্রেয়েট নয় মোটেই,
ওরা একে ওপরের পিঠে চড়ে
শরীরের জ্বালা মেটায়...

ঢেউরা কি somokami ? কি জানি ...
যতটুকু জানি-
ওদের উৎস tO সে এক গর্ভবতী নদীর নাভিতে,

ঢেউদের কি কোনো হৃদয় ache ?
ওরা কি শুধু শারীরিক ?
nodi majhe ধেয়ে চলা 
শুধু লেফট রাইট, লেফট রাইট?


যখন রাত্রে জ্যোৎস্নার dol এসে
নদীর তীরে ese তাবু ফেলে যায়
চাঁদনী রাতের পাহারায়,
মধ্যরাতে দুলে ওঠe জেলেদের নৌকা
প্রাণে প্রাণেr dol lege তরঙ্গ অনুভব হয়,
শরীরের প্রতিটা রোমকূপে ,
বুকের প্রতিটা অলিন্দে
আমি যেন ঢেউ হয়ে যাই !

তীরে তীরে এইসব ঢেউদের মধ্যরাতে জেগে থাকা
হাওয়ার তাড়নায় সারারাত দুলতে থাকা শরীর
দুমড়ে মুচড়ে সুনামী হতে চায়
হাত বাড়িয়ে দেখি, চাriপাশ onor অন্ধকার,
নদী শুয়ে আছে শৈত্য প্রবাহে,
পঙ্কিল তন্দ্রায়,    
ঢেউয়ের ডাকে সাড়া দিতে তার
শুধু ঘুম পায়

শুধু ঘুম পায় ।

১৬ অক্টোবর ২০১৩
মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

কমান্ডিং অফিসারের ব্লগ



কমান্ডিং অফিসারের ব্লগ


সবাই কমান্ডার নয়
কেউ কেউ সেনাপতি হয় ।

কিছু কিছু সমতল অঙ্গন হয় রণাঙ্গণ

এই যে দেখছ X অ্যাক্সিস
         এক সমতল
         পুকুরের জল
এলো মেলো ঢেউদের প্যারেড গ্রাউন্ড,
তারা পায়ে পায়ে গুনছে “এক দো এক”

ঘাটের কিনারা বরাবর
রেখায় রেখায় ঢেউদের মার্চ করে যাওয়া
মধ্যপুকুরে সূর্যরশ্মির Y  অ্যাক্সিস
       বয়সদের রৌদ্র বরাবর উপরনিচ বেড়ে ওঠা
সংসারের প্রতিবিম্বের প্রতিফলন ।

এই সব জীবন যাপনের সামাজিক দ্বিমাত্রিক ছবি
প্রতিটা পিক্সেলে , প্রতিটা বিন্দুতে , আপন অস্তিত্বের সংগ্রাম
           অভিযোগ, তর্ক, লাথা-লাথি, ডাইভোর্স...
এসবই সামরিক সজ্জার ফরমেশনে,
র‍্যাংক ও ফাইলে দাঁড়িয়ে গেলে
দিব্বি ছন্দোময় কুচকাওয়াজে
কদমে কদম মেলানো যায় ।

প্রমান চান ?
একটা ঢিল ছুড়ুন পুকুরে

জলের তল আন্দোলিত হবে, জলতলের ঘর্ষণে
জন্ম নেবে এক বিন্দু

বিন্দু ?

এর-ই সমাহার থেকে জন্মাবে
             এক অগ্রনী
             এক ঢেউ
অগ্রসর হতে থাকবে বক্রসমতলে
               পিছু পিছু
               কিছু কিছু
অন্য ঢেউদের বাহিনী
ঘটে যাবে Z অ্যাক্সিসের উত্তরণ

ট্রাই করে দেখুন
কখনো অখুশির আলোড়নে , কখনো খুশির উদ্দীপনায়
স্থান কাল পাত্র ভেদে ত্রিমাত্রিক এই ছবি
হৃদয়ে তরঙ্গানুভব আনে,  প্রাণে ঢেউ খেলে যায়

সেখানে সব ক জন সেনাপতি নয়

সেখানে কেউ একজনই কমান্ডার হয় ।

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩
মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

Thursday, October 24, 2013

ডিসিপ্লিন

ডিসিপ্লিন

বোধের মধ্যে আছে এক শক্তিশালী বিশ্বাস
না জেনেও বিশ্বাস করা একটা নিয়মানুবর্তিতা

যে দিন জেনেছি
        মার্চ করে গেছি
লেফটে মিলিয়ে লেফট
       রাইটে রাইট

মাটিকে ধুলো মনে হয়নি কখনো

যে অজানা রণক্ষেত্রে রেখেছি মাথা, দেহ

সেটি মা-ই ।


২০ অক্টোবর ২০১৩
মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

সার্চ অপারেশন

সার্চ অপারেশন


ইউনিটের শুনশান রাস্তায়
এক কন্টিজেন্ট এয়ারম্যানের জটলা
তখন হয়তো মাঝরাত হবে
পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ আর
থ্রী নট থ্রী সহ
নিস্তব্ধতার ঘন অন্ধকারে
কোন এক সান্ত্রী এ ডব্লিউ এল’,
                 নিখোঁজ
তাঁবুতে তাঁবুতে চলছে রোল কল’,
                 অনুসন্ধান ।

এই সার্চ অপারেশনে আমার কর্তব্য  কী
আমায় কী খুঁজতে হবে
             আলো ?
নাকি কোনো প্রেষণা
নাকি কালো কালো রাত্রির আড়ালে

আমিও ডিসার্টার হয়ে যাব ?



১৪ অক্টোবর ২০১৩
মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

Sunday, October 20, 2013

বিকানীরের সূর্যাস্ত


বিকানীরের সূর্যাস্ত

শান্তির অভিযানে যোদ্ধার অগ্নিপরীক্ষা ভুল হবে যদি ভাবো এটা সমর প্রাঙ্গন
মরুভূমির বুক কেটে বসে আছে রানওয়ে সারি সারি আননোন 'ইউ এফ ও'র উড্ডয়ন
কার আকাশ , মাটি কার ? প্রচলিত প্রশ্নে উত্তর খুঁজে ফেরে যত রাজ-পন্ডিত
বালিয়াড়ির গর্ভে তেজঃবিকিরণ-ঝড়মরুভূমির বুকে লেখে মরীচিকা হার-জিত
সীমানার তর্কে অসীম এক দ্বন্দ্ব , পাহারায় পাহারায় রেখা বদল দৈনিক
খুঁজে ফেরে দেশপ্রেম মদিরার বোতলে পেটেরই দায়ে পড়ে সিপাহীরা সৈনিক
বিকানীরের বিকালে বিশাল দিগন্তে ক্লান্ত নোনতা ঘাম লু হাওয়া লুটে খায়
তোমাকে আমার তখন মনে পড়ে অসীমা অ্যাংকলেট বুটপায়ে নেমে পড়ি রাস্তায়
একই ফ্লাইট লেফট রাইট, সার্ভিস ক্যাপ অন একই দিন রাত্রির গোধুলি গগন

দিগন্ত ডুবছে ঐ বালিয়াড়ির ওপারে ক্যানভাসে মুছে দিয়ে সামরিক জীবন ।


২ ফেবরুয়ারী ২০০৪
জয়সালমীর, রাজস্থান

Friday, October 18, 2013

পিরামিডের নীচে

পিরামিডের নীচে


সংগ্রামী কালবেলা, অনুযোগ কিংবা বিষাদে
স্রোতস্বিনী পাল্টালো তার টেরাকোটা রং
ফড়িং, ঘাস পাতা, কর্দমাক্ত নুড়ি পাথর
নিজেরই বক্ষে অস্তমিত সূর্যের স্যালুট নিয়ে
আবারও একটা নদী শহীদ হলো
আর
কবিরা ফিরে পেল স্বাধীনতা
শ্রান্ত কল্পনার ক্লান্ত শরীর, অক্ষৌহিনী পায়ের ঘর্মাক্ত কদম-বদল
সমস্ত রাত্রি জুড়ে
কুচকাওয়াজে খয়ে যাওয়া প্যারেড গ্রাউন্ড

এখানে কোন জল নেই
স্রোত আছে, মাংসপেশী, রক্ত, তরল ঘাম আর
পিরামিডের নিচে শুধু
পলিমাটি ফরমাস ।



২৭ অক্টোবর ২০১৩

মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

Monday, October 7, 2013

বিশ বছর পর


বিশ বছর পর

যুদ্ধের স্মৃতিগুলো দিয়েছে ডুব সাঁতার
সপ্ত সাগর আর অসংখ্য নদী
সীমানার ছাড়িয়ে সীমা
ছেড়ে গেছে অনেক রাজ্যপাট

সৈনিকের সংগ্রাম ,
দেশ ভক্তি প্রেম
এখানে ওখানে, শ্যাওলা হয়ে জমে আছে ইটের পাঁজরে,
পুলিশ থানার দেওয়ালে , বাবুদের অফিসে
ছবি হয়ে আছে
অমর জ্যোতি জওয়ান ।

আবার বিশ বছর পর
দেখা হল তোমার আমার
তেমনই দুর্বোধ্য তুমি কবিতার খাতায়
তোমায় লিখতে গিয়ে দেখি
আমার শুধু বানান ভুল হয়ে যায় ।


অথবা সময় হয়েছে বৃদ্ধ
বোকা বাক্সে বন্দী ঘর
নিদেন পক্ষে পাড়াতুত পলিটিক্স
চৌমাথার মোড়
হলুদ ট্যাক্সির হর্ণ, অফিসের ব্যস্ততা
ফুটপাতে চলতে থাকা অগনিত মানুষের ঢল
কুড়ি বছর পর
মুখোমুখি আমি
পার্থ, পলাশ, পুলকের সাথে
হুতাশী দুপুরের উপসংহার
এক দো এক, এক দো এক
বিকেলের কোমল হৃদয় জুড়ে ছুয়ে যায়
মার্চ করে যায় – শহীদ মিনার


জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার
ওদের ইচ্ছে, স্বপ্ন, প্রেমময় অনুভুতি, ভালোলাগা অনুক্ষণ
পুরানো ডায়েরীর জীর্ন পাতা
হারানো লেখা লেখি, বয়ঃসন্ধি প্রেম
ক্যাম্প এরিয়ার ফ্রী ইনল্যান্ড
কোন এক অশরীরী সৈনিকের অপেক্ষায়
তার প্রেমিকার চিঠি

বিশ বিশ বছরের পার
জন্মেছে অনেক ঘাস , গুল্ম লতার ঝাড়
আমাদের একুশ নং সিগনাল ইউনিটে
ডাকঘরের সমাধির উপরে
কারা যেন টাঙিয়ে দিয়ে গেছে
ধাতব টাওয়ার
এই সব স্মৃতিকথা, স্মৃতিপথ মুছে যাওয়া পুরাতন
মাউসের এক ক্লিকে ডিলিট করে দিয়েছে

এয়ারটেল , ভোডাফোন ।



১৭ জুলাই ২০১৩
মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

Thursday, October 3, 2013

মহালয়া

মহালয়া

ত্রিশূলের গায়ে লেগে
মহালয়ার আলো
অগ্নির আপগ্রেডেশন
ভার্সন পাল্টালো ।

চকচক বুটের পালিশ
অফিসের ব্যস্ততা
অসংখ্য শব্দের ভিড়ে
হারালো কবিতা

রাজপথে হিংসা তাই
সীমানা টহলে
আবারও দূর্গা এলো
অজন্তা চপ্পলে ।

৫ অক্টোবর ২০১৩
মহাবীর এনক্লেভ, নতুন দিল্লি

Wednesday, October 2, 2013

মিগ টোয়েন্টি ওয়ান

মিগ টোয়েন্টি ওয়ান
----পীযূষকান্তি বিশ্বাস

করোটির দুদিকে দুটো গোল গোল কোটরে রক্তচক্ষু,
জ্বালিয়ে যুদ্ধ-জিঘাংসা
দুটো প্রসারিত চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা ডানায়
পশ্চাতে এ টি এফ ঘসে
ভুস করে উড়ে গেল সুপারসোনিক মিগ টোয়েন্টি ওয়ান
রানওয়ে শুয়ে আছে বাসর শয্যায়
সঙ্গম হবে, আগুনের মিলনমেলায় ।

এক দো এক, এক দো এক
আলফা ব্রাভো চার্লি বিদেশী অশরীরীর টাটকা রক্তে
মধ্যরাত্রির পাহাড়ি ঘাসে
বড়াখানা আজ

শিশির আর মশকের সাপ্তাহিক বনভোজনে
শীত আর অসিতের প্রহরায়
এক তরুণ এয়ারম্যান জানুয়ারীর এমনই এক অমাবস্যায়
প্যাট্রোলিং নাইট ডিউটি করে ।

[সাইড ওয়াক]
"গুড ইভনিং স্যার"
অর্থাৎঃ সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম বোরোলিন
"হাও আর ইউ, অর ক্যাইসা হ্যায়"
অর্থাৎঃবরফের ফাঁকে বুঝি ঢলে পড়ে চাঁদ
"স্ক্রাম্বল স্ক্রাম্বল"
অর্থাৎঃ বড় ভয়াবহ এ যে, বড় গতিময়
"মে ডে, মে ডে"
অর্থাৎঃখ্যাচর খ্যাচ, গাড়ি চালায় বংশীবদন
"স্টারবোর্ড ইঞ্জিন লিক"
অর্থাৎঃ শহর সে লেকে গাঁও তক চুঁইয়ে , চুঁইয়ে পড়ে দেশপ্রেম ।

[দু মিনিট কমার্সিয়াল ব্রেক]
আমি বড় হয়রান হে কমান্ডিং অফিসার , কিংকর্তব্যবিমূঢ়
কিসের যুদ্ধ এ ? কাদের লড়াই
নিজেরই বুকে ক্ষত নিয়ে কৃত্রিম সীমানার বড়াই ?
আমায় তুমি নিয়ে চল কোথাও,
হারিয়ে যাই জলঙ্গীর পারে
কৃত্রিমতার ওপারে কোন সবুজের ভিতরে ,
বারুদহীন, বারুবরণ দেশপ্রেমহীন

যেখানে কোন ধান ক্ষেত, 
কোন পল্লীর স্তব্ধতায়
মাটির নিকানো উঠানে দিন ডুবে যায় 
সাঁঝের আকাশে মুছে যায় দিগন্ত
ম্লান হয়ে আসে সমস্তরেখা

সাঁঝের বেলায় কৃষকবধুর হাতে প্রদীপ
দেশ বোঝে না, কাল বোঝে না
অন্ধকার ভরা রণক্ষেত্রে সীমানা খোঁজে না
মধ্যরাতে 
সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে চূর্ণীর জীবনস্রোত

[পপ আপ এলার্ট]
"ক্রিং ক্রিং ক্রিং(হট লাইন)"
অর্থাৎঃএক্সকিউজ মি...
"আলফা আলফা আলফা, ক্রস ল্যান্ডিং, হ্যালো বেস কমান্ডার ? "
অর্থাৎঃ বলো কোন পার ভিড়িবে তোমার সোনার তরী  ?

[রিক্যাপ]
করোটির দু দিকে দুটো গোল গোল কোটরে
জ্বালিয়ে  যুদ্ধ-জিঘাংসা
দুর্দম প্রচণ্ড দেগে আগুনের গোলা
উড়ান দিয়েছে সুপারসোনিক মিগ টোয়েন্টি ওয়ান

তার স্ফুলিঙ্গের আলোয় আলোকিত হচ্ছে
চেনাবের সমস্ত গিরিখাত
বিপাশা , শতদ্রুর ঢেউয়ে, তার বিচ্ছুরিত আলোয়
সার্ভিস ক্যাপ অন
এক সামান্য এয়ারম্যান
তার জীবনের স্রোত খুঁজে ফেরে ।



৮ জানুয়ারী ১৯৯৬
সতওয়ারী, জম্মু এন্ড কাশ্মীর ।


কারাকোরামের পথে

তারপর যেতে যেতে যেতে পথে হঠাৎ একদিন
কারাকোরামের সাথে দেখা
কাছিমের খোলার মত আকাশ উল্টে
দাঁড়িয়ে আছে তার কাঁধে
লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে
দিনরাত পাহারায়
সারি সারি সরলবর্গীয় উদ্ভিদের সাথে
তারা তাঁবু খাটিয়েছে ।


দেবদারু, শিশু, ফার, পাইনের বাহিনীতে
কারা গো রাম, কারাকোরাম
কারা রহিম ?
অগ্নিগর্ভ অভিযানের অহংকারী পদচিহ্ন
পেজা তুলোর মত শুভ্র তুষারপাতে
কবেকার হিমবাহে মিশে গেছে ।

কারাকোরামের আঁখি মুদে আছে শ্যাওলায়
দুঃখ জরা ব্যাধীতে সে বধির ও মূক
চমরী গায়ের দুধে হিমবাহী নদী
ভরে নেয় স্তন , অপুষ্ট বুক

ভূস্বর্গ কাশ্মীর
অগ্নিগর্ভা ফিনিক্সের পাখনা
বাপেরই নিজের গর্ভে জমেছে পাহাড়ী গণিত নিয়ে
দুর্গম জ্যামিতির প্রতিটা মাইলস্টোনে
খোদায় করে চলেছে সীমারেখা

কোথায় চলেছে এই রেখা ?
এই পথ ?

যে দিকেই তাকাই
মজদুর হিমালয়
নিজেরই পর্বত ভাঙতে থাকে
পাহাড়ী গ্রাম দুরমুস করে
পরিব্রাজকের পায়ে সড়ক বানায়

কারা এই পথচারী টাইগার হিল ? জুবার হাইটস ?
কারা এই রহিম,
কারা বা রাম ?
কাদের এই মার্গ, এই পথ ?

বেলচা,  কোদাল নিয়ে কঠিন দুহাতে
মাথাটা হাটুতে নামিয়ে
ফিবছর অবিরাম

কাদের ভাঙছ তুমি কারাকোরাম ?


১২ আগস্ট, ১৯৯৭
সতওয়ারী, জম্মু

পিপাসিত প্যারাস্যুট


পিপাসিত প্যারাস্যুট


পিপাসিত প্যারাস্যুটের প্রতিদিনের প্রাসঙ্গিক সুরাপান
ঘুম ঘুম চোখে ঢুলছে
মাতাল বিমান
বাপ রে  কী রোমান্স!
টানটান শরীর, স্নায়ু-যুদ্ধ, লিঙ্গ উত্তোলন
সিভিল ডিফেন্স, সীমা সুরক্ষা বল
তারপর ?
হিমায়িত ফ্রী-ফল ?

আকাশটা ছাতাকারে মুঠোর ভিতর
একহাতে পানীয়
অন্যহাতে মাটি
রানওয়ের দুপাশে ইতিহাসের সামরিক ঘাটি,
এভাবে অনেকদিন, এরপর অনেক বছর
শ্যাওলায় ঢেকে গেছে জীবাস্ম প্রস্তর 

প্রস্তর তাম্র, প্রস্তর লৌহ , কার্বণ
পিপাসিত প্যারাস্যুট বার মাস তের পার্বন ।


১২ জুন, ১৯৯৭

সতওয়ারী, জম্মু

চোলি কে পীছে ক্যা হ্যায়



চোলি কে পীছে ক্যা হ্যায়

বারুদের বাদামী ধোঁয়া বাঁচিয়ে
শ্রাবনের যে রামধনু রাঙালো আকাশ,
সেই রঙে রাঙিয়েছিলাম এই চোলি তোমার জন্য, সুমনা
তুমি বলেছিলে,
ডালিমের কোয়া ছুঁতে হলে ঠোঁটে
সাতরঙা চোলিতে সাজাতে হবে তোমার মুখাবয়ব ।
ফুলে ঢাকা পালঙ্ক সজ্জায় আমার গর্বিত চোখের সামনে তুমি
উন্মোচিত করবে বিশ্ব ।
তোমার বুকের আতর গন্ধে
আমার গায়ে মাখা বারুদের গন্ধ
দূরীভূত হবে ভেবেই,
এই চোলিতে লিখেছিলাম
'সত্যমেব জয়তে' ।

আমার বুকের মাঝখানে জিভ রেখে, প্রেমের বিষ মাখিয়ে
বলেছিলে, যেখানে রয়েছে তোমার হৃদয় --
কিস্তোয়াড়ের পথে রামবেন ক্যাম্পে,
আমাকে ছুঁয়ে গেছে মুক্তির বিস্ফোরণ,
মাথার উপর দিয়ে বয়ে গেছে আর ডি এক্সের ঝড়
চোখের পাতায় বসেছে টি এন টির আধপোড়া কালি
বুকের এখানে এখন ফেটে যাওয়া বুলেটের নীল ঘা
সেই ক্ষত,
উর্দির অজীর্ন ঘামে মাখা মাখি হবে বলে
সেই চোলিতে ঢেকে দিয়ে গিয়েছে কারা ।

বারুদের বাদামী ধোঁয়া বাঁচিয়ে
শ্রাবনের যে রামধনু রাঙালো আকাশ
ওই রঙে রাঙিয়েছিলাম এই চোলি, তোমার জন্য সুমনা
তা এখনো আমার বুকের উপরে ।

শুধু
রক্ত আর পুঁজে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে
'সত্যমেব জয়তে' । 


সতওয়ারী, জম্মু
২০-০৭-১৯৯৭

যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন


যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন

উড়ানে মিশে গেল একদল রামধনুর ঝাঁক
লুব্ধকের তীব্র আবেগে ছিন্নভিন্ন আকাশে তখন আলোকের জটলা
বেনীআসহকলা...

"মিগ ২৯ ক্রাশড"

আমার প্রিয়ার হাতে
ফিল্ড এরিয়ার স্ট্যাম্প মারা ফ্রী ইনল্যান্ড

দীপ ছিল শিখা ছিল বুকে জ্বলে জ্বলে উদাসী
মৌ ছিল , মধু ছিল ভরা অনাস্বাদিত ,অনাঘ্রাত
মুকুল ছিল, ফুটত হয়তো কলি
ঐ আসে ঐ বুঝি উড়ে আসে অলি...

মেঘের আড়ালে দেখেছ তোমরা আধফালি চাঁদ
তারকাদের মাঝে টুকরা টুকরা বিমানের ধ্বংসাবশেষ

ঐ দেখ, ছত্রভঙ্গ নক্ষত্রদের পশ্চাদ্পসরণ
ডানা ঝাপটায়ে ঘরে ফেরে পরাজিত মেঘ

মিলাচ্ছে রামধনু সন্ধ্যার আকাশে
আমারই চিতার আগুনে

সর্বগ্রাসী আলোক উৎসবে !


১২ অক্টোবর, ১৯৯৭
সতওয়ারী, জম্মু